কালের সাক্ষী জামালপুরের শাহী মসজিদ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
ইতিহাস-ঐতিহ্যে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে জামালপুরের শাহী মসজিদ। নির্মাণশৈলীর দিক থেকে মুসলিম অন্যান্য স্থাপত্যের দৃষ্টিতে খুব উচ্চতর পর্যায়ের না হলেও, ঐ স্থানের মুসলিম সম্প্রদায়কে এখনো আলোড়িত এবং উদ্বেলিত করে প্রাচীন এই স্থাপনাটি। গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সিনিয়র আলীম মাদরাসা সংলগ্ন স্থানে মসজিদটি অবস্থিত।
স্মৃতি বিজরিত এই প্রত্নতত্বটি ঠিক কত খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল তার সুনির্দিষ্ট তারিখ বা ইতিহাস কারো জানা না থাকলেও জনশ্রুতি আছে আজ থেকে ৬’শ বছর আগে অর্থাৎ ৯’শ ২৩ খ্রিষ্টাব্দে ইরাক থেকে যে ৩’শ ৬০ জন অলি কামেল ব্যক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার করার জন্য যান, তার মধ্যে হযরত শাহ্ জামাল এক জন।
আর এই প্রাচীন ইমারতটি হযরত শাহ্ জামালের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে শাহী মসজিদ। এছাড়া তার নামানুসারে ইউনিয়নের নাম হয়েছে জামালপুর। মসজিদের পাশেই রয়েছে হযরত শাহ্ জামালের মাজার শরীফ। মসজিদের মূল অবকাঠামো এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। তবে মসজিদটি কয়েক ফুট মাটির নিচে দেবে গেছে বলে এলাকার অনেকই জানান।
প্রত্নতাত্নিক নিদর্শণটির নিচের দেয়ালে আছে ইটের ৭২ ইঞ্চি ও উপরের দেয়ালে আছে ৫৬ ইঞ্চি পুরু দেয়াল। তাই এটি বাহির থেকে অনেক বড় মনে হলেও মসজিদের ভিতরে শুধু মাত্র ২ কাতারের নামাজ আদায় করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এলাকার লোকজনের উদ্যোগে মসজিদের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মসজিদের সামনে ৩ দফা বারান্দা ও ছাদ নির্মাণ করে মসজিদের মেঝে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এই মসজিদ ও হযরত শাহ্ জামালের মাজার শরীফকে কেন্দ্র করে এই গড়ে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ, পোষ্ট অফিস, মাধ্যমিক বালক ও বালিকা বিদ্যালয়, ফাজিল মাদ্রাসা, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা অফিস। মসজিদের বিভিন্ন মানতের টাকা এবং জনগণের অনুদানের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে এখানকার এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। গড়ে উঠেছে বাজার। বাজারের দোকানগুলোর মাধ্যমে শতাধিক পরিবার উপকৃত হচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের শতবর্ষী ব্যক্তি গোলাম হোসেন জানান, মসজিদের মূল অবকাঠামোতে নামাজ পড়লে গা ছমছম করে উঠে। মহুর্তের মধ্যে মনের মধ্যে জেগে উঠে আল্লাহ ভীতি। প্রতি শুক্রবারেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ মানতের পুরণের জন্য চাল, হাঁস, মুরগি, ছাগল, গরু, নিয়ে এসে পোলাও রান্না করে বিতরণ করেন।যে কেউ যেকোনও নিয়তেই মানত করলে আলাহর রহমতে তা পূরণ হয় বলে জানান তিনি।
মসজিদ সংলগ্ন বাসিন্দা ও এনজিও সদস্য এম এ কাইয়ুম মন্ডল জানান, আমার ১০সিঁড়ি পূর্বের বংশধর সৈয়দ ভোম আলী ভারতের শিলিগুড়ি থেকে, সুলতান মাহমুদের আমলে হযরত খাঁজা মঈন উদ্দিন চিচতিয়ার নির্দিশে, ইসলাম প্রচারের জন্য এই এলাকায় এসে হযরত শাহ জামালের সাথে মিলিত হন। সম্ভাবত তাঁরাই এই মসজিদ নির্মাণ করেন এবং মসজিদের পাশে একটি পুকুর খনন করেন।
তিনি জানান, ‘কথিত আছে-এই পুকুরে এক সময় সোনার চালন ভাসতো। পুকুর খননের কোন ইতিহাস কারো জানা নেই। লোকমুখে শুনেছি-এই এলাকায় বিরাট জঙ্গল ছিল। জঙ্গলে বাঘ-ভালল্লুকও বাস করত। মসজিদের দুই পার্শ্বে পাহাড়াদারের মত সার্বক্ষণিক ২টি বাঘ থাকতো। শুনেছি ফসল ফলানোর জন্য এই জঙ্গল পরিস্কার করার সময় এই মসজিদ ও পুকুর আবিস্কৃত হয়। তখন থেকেই এই মসজিদের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ আদায় করতো’।
জানা যায়, মোগল আমলেই ১৯’শ শতাব্দির ১ম বা ২য় দশকে এই মসজিদ আবিস্কার হয়।মোগল আমল থেকেই হযরত শাহ্ জামালের নামের শেষে চৌধুরী উপাধি দেয়া হয়। জিয়াউর রহমানের সময় ড. আর.এ গণি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন সময় এই মসজিদ সংরক্ষণের জন্য প্রতিনিধি প্রেরণ করলেও সরকার বদলের পর থেকে অদ্যাবধি মসজিদ ও মাজার শরীফ ঐ অবস্থায় আছে। স্থানীয় মানুষের প্রচেষ্টায় বর্তমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/জেডএমলি